লালবাবু
চার দশক পরে
পরন্ত দুপুরে
ফিরে এলে লালবাবু,
ধবধবে ধুতি, খোলা বুক,
ঠোঙা হাতা শার্ট,
আলতা হাতে কাঁচের কলস,
কালো ফ্রেমে মোটা কাঁচ,
হাঁস-পানা শরীর,
আলতা-মাখা মুখ।
মা লক্ষী, রাজলক্ষী, সতীন,
গিন্নী, এয়োতী, তৈরী সবাই,
কাঁধ বেয়ে এলিয়ে যায়,
রিঠে ধোওয়া কেশ,
ঝামা মাজা পায়ে,
সুচারুর বেশ।
এলে লাল বাবু?
এক ঝলক হাসি,
এ গালে সে গালে,
অভিমানে অগোচরে।
আসন বাঁধানো উঠোন,
আয়েশের গালে খিলি করা পান,
তুলে দেয় তুলতুলে চরণ,
রং ধরা কোঁচানো কোলে,
তুলি হোল আঙুল তার,
এলিয়ে যায় আলতায়,
বিলাসের পরশ দিয়ে,
পায়ের আঙুলে তার।
ছোট বেলায়,
বড় সাধ ছিল, লালবাবু হব,
তখন কৈশোরের মাঝ বেলা,
উজ্জল আলোয় প্রেম-প্রেম খেলা.
বড়দের গোল গোল মুখে,
ড্যাবডেবে চোখে,
বিশেষণ জোটে বিশ্ব বখাটে।
হিংসে হয় লালবাবু,
জিতেছ তুমি বারবার,
অবারিত দ্বার তোমার,
পুরুষের অবর্তমানে,
আসন তোমার অন্দরের আড্ডায়,
ষোড়শী প্রেয়সী আমার,
তার কলাফুলের কচি আঙুলে,
বুলিয়েছে হাত কত বার,
আলতায় আহলাদ ছিল বলে তার,
থোরের সূতোতে জট লেগেছে মনে আমার,
মনের আবেগ মনেই রেখেছি,
মনের গোপনে বার বার।
আবছা হয়েছে আলতার ছায়া,
কালের চাকার চক্করে,
সুখ ভাসে আজ তোমায় ভেবে,
আমার মনের চত্বরে।
লালিত্যের ছোঁয়া পেলে,
গাল আজ আর হয় না লাল,
শরীরের সবুজ আজ,
উপছে গেছে লালে,
শিরা উপশিরায়, প্রগতির ঢালে।
শরতের সকালে,
পেঁজা তুলো পার করে,
লালবাবু, এসো তুমি এপারে,
টেনে দিও আলতার প্রলেপ,
প্রতিমার পায়ে,
আমি থাকব তোমার প্রতীক্ষায়,
আশ্বিনের মেঘের দিকে চেয়ে ।
মনে থাকবে?
থাকবে তো?
আবার আসবে তো?
লাল বাবু, আসবে তো?
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন