স্বপ্নের সৈকতাবাস ইওরহোম
ইচ্ছে করে ছুটে যাই একবার
পুরীর সমুদ্র সৈকতে গ্রীষ্ম অবসরে,
পাঁচ দশক আগে শেষ দেখা
স্বপ্নের সৈকতাবাস "ইওরহোম",
শ্বেত প্রাসাদের আঁচল আগলে
শ্যামলা গায়ে শৈলেন-অনুপমা স্নেহে
দাঁড়িয়ে ছিল সে শান্ত দীপ্তিতে
প্রাচীন ঐতিহ্যের ধ্বজা ধারনে।
আমার কৈশোর বেলার স্মৃতি
ধরা ছিল তার সুখের আঁচলে,
শুনেছি সে আর নেই সেখানে,
শ্বেতশুভ্র এক পান্থাবাস
নিয়েছে দখল তার,
ভাবিনি হারাবে সে এমন করে
গোপনে আমার অজান্তে৷
কৈশোর বড় আপন হতে চায়
টানে কাছে বার বার, ছুঁতে চায়,
ফেলে আসা ছড়ানো সুখ স্মৃতি।
জানতে ইচ্ছে হয়, কেমন আছে ওরা
পেটচুক্তি ভুড়িভোজ চলছে কি আজও?
লক্ষীটকিজের দরজায় সিরাপ সরবৎ,
দূর্গাবাড়ির টেবিল টেনিস বোর্ড,
মুচিসাহির সৌখিন হরিণ চামড়ার চপ্পল,
আজও কি তেমনই, যেমন ছিল সেদিন।
দোতলার বারান্দার এক কোনে,
এলিয়ে আলস্যের আরাম-কেদারায়,
অলস দৃষ্টিতে দেখা গেট পেরিয়ে রাস্তা,
বাঁধানো পাড়, পা ঢাকা বালুকা পেরিয়ে
সমুদ্দুরের অনন্ত জলরাশি, আড়ালে আকাশ।
পূবের আকাশ রাঙিয়ে যায়
স্নিগ্ধ রক্তিম আভায়,
ভোর হয় হয়, মানুষের অলস পা ছেপে যায়
আবর্তিত ঢেউয়ের তরতাজা ভেজা বালুচরে,
ভীত কাঁকড়াছানা ছুটে যায় নিরাপদ আশ্রয়ে,
প্রাতর্ভ্রমণে মানুষ, ফেরা ঢেউয়ে মেলায় পা,
ঝিনুক তোলে, কড়ি কুড়োয়, শঙ্খ খোঁজে,
বাতাসে, বেহাল তাদের কেশ, পরিধান, প্রসাধন।
মালে, মানুষে, বোঝাই সাইকেল রিক্সা
বাটি বেলের টিং টিং শব্দে চলে এগিয়ে,
ব্রেক চাপা শব্দ তোলে, পিচ রাস্তার ঢালে,
জানান দিয়ে যায় ভিড়েছে ভোরের গাড়ি,
এসেছে তীর্থ যাত্রী, এসেছে ভ্রমন পিপাসু পর্যটক,
ব্যাস্ত সবাই অস্থায়ী আস্তানার সন্ধানে
বাঁক কাঁধে ময়রা, কাছিতে দোলে তার ভান্ডার,
হেঁকে যায় হাটা পথে পসরার প্রচারে।
একে একে ফিরে আসে তিনপাট নাও
তপ্ত বেলাভূমিতে নুলিয়াদের রশির টানে
দুপুর গড়িয়ে বিকেল, শেষে সন্ধ্যে,
বদলায় দৃশ্য সময়ের ছন্দে, আনন্দে
অমাবস্যায় ঢেউ ধেয়ে আসে পারে
গাঢ় অন্ধকার ফনায় ফেনিল মুকুটে.
ছায়াসাজে মানুষ ফিরে যায় পার ধরে।
সমুদ্দুরের সঙ্গে আমার আলাপচারিতা
সারারাত সঙ্গোপনে, একান্তে, কানে কানে,
এক ঝলক জলভেজা বাতাসে ভাঙে ঘুম,
চেয়ে দেখি, ভোরের একরতি সোনালী আলো
জানালার আরশি বেয়ে জড়িয়েছে আমায়
এমন করেই দিন আসে আর ফিরে যায়
ইচ্ছে তবুও বেঁচে থাকে জাপটে আমায়।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন